গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামে লাক্সারি ফ্যান কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ১০ শ্রমিক নিহত ও আরো দুজন আহত হয়েছেন। নিহতদের মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের পর নিহতদের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মরদেহগুলোর দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং কারখানা মালিকের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া হয়েছে। আহত দুজন ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। বন্ধ আছে আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানাটি। আর ওই ফ্যান কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ছিল না বলে দাবি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের। স্থানীয় বাসিন্দা, কারখানা শ্রমিক এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাগণ বলছেন, একাধিক বহির্গমন পথ থাকলে এক সঙ্গে এতগুলো প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো না। তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া য়ায়নি। দুর্ঘটনায় নিহত সকলের নাম পরিচয়ই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন- ময়মনসিংহের বাঘবপুর গ্রামের মো. সেলিমের ছেলে তরিকুল ইসলাম, দিনাজপুরের বারপাটিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে মো. লিমন ইসলাম, সদর উপজেলার কালনী খান বাড়ি গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল খান, একই উপজেলার কেশরিতা গ্রামের বীরবল চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাস, শ্রীপুর উপজেলার মারতা গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ছেলে মো. শামীম, একই উপজেলার মারতা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ, রংপুরের কাচুবকলতলা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম, নরসিংদী জেলার চর কাশিমনগর গ্রামের সজল মিয়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্চারামপুর থানার মোর্শেদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়া ও নওগাঁর লাল মিয়ার ছেলে পারভেজ।
সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামের প্রত্যন্ত এই এলাকায় গড়ে তোলা হয় রওজা হাইটেক’র লাক্সারি ফ্যান নামের কারখানাটি। রোববার সন্ধ্যায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যান ১০ শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট পৌনে ১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভায়। এরপর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রীনা পারভীনসহ ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে তাৎক্ষনিকভাবে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক। ভয়াবহ এই প্রাণহানির ঘটনার পর সকাল থেকেই কারখানার সামনে শ্রমিক ও স্থানীয় জনতা ভিড় জমাচ্ছেন। কারখানা ফটকে রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফর্মে অনিশ্চয়তায় রয়েছে কারখানার শতাধিক শ্রমিক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নিহতের সহকর্মীরা জানান, নিয়ম-কানুন না মেনে কারখানাটি চলমান থাকায় এবং তৃতীয় তলায় ঢোকার ও বের হওয়ার একাধিক গেট না থাকায় এত বেশি সংখ্যক লোজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। গ্রামের ভেতরে আবাসিক এলাকায় ভবন নির্মাণ করে ফ্যান কারখানাটি পরিচালিত হয়। এতে ছাদে নির্মিত টিনশেডে প্রয়োজনীয় দরজা জানালা ছিল না। ফলে অগ্নিকাণ্ডের পর শ্রমিকরা বের হয়ে আসতে পারেনি।
শহীদ তাউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. প্রণয় ভূষন দাস জানান, ওই ঘটনায় দ্বগ্ধ স্থানীয় কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ও জামুনা এলাকার আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. হাসান হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদিকে, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহিনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় দেয়া হয়েছে ৭ কার্যদিবস। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার করে টাকা প্রদানের ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও আলাদা তদন্ত টিম গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারি পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, নিভৃত এবং গ্রাম এলাকায় গড়ে ওঠা লাক্সারি ফ্যান কারখানায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রপাতি ছিলনা। ছোট কারখানার টিনশেডের বর্ধিত অংশে জরুরি একাধিক বহির্গমন পথ না থাকায় এক সঙ্গে এতগুলো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কারখানায় নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতি পূরণ দেয়া হবে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি ও কারণ এখনো জানতে পারে নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস বিভাগ।