দিন যত ঘনিয়ে আসছে সম্মেলনের প্রতি মানুষের আগ্রহ ততই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠনের ফলে দলটির নেতাকর্মী?রা নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় দলীয় সভাপতি শেখ হা?সিনা জি?রো টলারেন্স নী?তি গ্রহণ করেছেন। ফলে সহযোগী সংগঠনের মতো দলটির কেন্দ্রীয় সম্মেলনেও ক্লিন ইমেজের দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। দলের নেতারা জানান, বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদে ২৯টি জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্বচ্ছ ও ত্যাগী নেতাদের ঠাঁই হয়েছে। কোনো কোনো জেলায় পুরনো নেতাদের বহাল রাখা হলেও কোথাও কোথাও নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এক্ষেত্রে বিতর্কিত কাউকে দলে স্থান দেয়া হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার একটি পরিচ্ছন্ন ও তারুণ্য নির্ভর কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে নতুন নেতৃত্বের হাতে দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
বর্তমান ও সাবেক নেতা এবং সম্ভাব্য নতুন মুখ যারা, সবার তথ্য-উপাত্ত বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন তিনি। তারা জানান, সবার আমলনামা প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে প্রস্তুত আছে। যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন, দলে কোন্দল সৃষ্টি করেছেন, দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন,যারা টাকা নিয়ে কমিটি, উপকমিটি দিয়েছেন, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে দলের দুর্নাম কুড়িয়েছেন, নিজ স্বার্থে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজদের দলে নিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন, তাদের সবাইকে শুধু কমিটি থেকে বাদ দেয়া হবে না রাজনীতি থেকেও দূরে রাখা হবে। এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন জেলার কাউন্সিলে গিয়ে ক্লিন ইমেজ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। পাশাপাশি বলেছেন, আওয়ামী লীগ কাউকে বাদ দেয় না কেবল নেতৃত্বের পরিবর্তন করে। কাউন্সিল সফল করতে জেলা কমিটিগুলোর সম্মেলন হচ্ছে। এরইমধ্যে ৩০টির মতো জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। ঢাকা ছেড়ে কেন্দ্রীয় নেতারা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধানে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে। আর স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এবার সম্মেলনে ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন শীর্ষ নেতারা। সভাপতি ছাড়া যে কোন পদে নতুন মুখ আসতে পারে। তাই সারাদেশে মূল আলোচনা এখন সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে। দলীয় সূত্র জানায়, এবার দল ও সরকারকে আলাদা করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়েছেন এমন অনেককেই সম্মেলনে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে।
আবার দলীয় পদ থেকে বাদ পড়েছেন কিন্তু দলীয় সভাপতির আস্থায় আছেন এমন অনেককে মন্ত্রিসভায় জায়গা দেয়া হতে পারে। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের আগামী নেতৃত্বে থাকবে বড় ধরনের চমক। দলের প্রায় সব বিভাগেই আনা হবে পরিবর্তন। বিশেষ করে সভাপতিমন্ডলীর ১৭টি পদ,সম্পাদকমন্ডলীর ৩৪টি পদ, কোষাধ্যাক্ষের ১টি পদ এবং ২৮টি সদস্য পদ, মোট ৮০টি পদের মধ্যে ৪০টির বেশি পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে বলে নেতাদের ধারণা। তারুণ্য নির্ভর কমিটিতে বাড়বে নারী প্রতিনিধিত্ব। এদিকে সম্মেলনে গঠনতন্ত্রের বড় কোন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, তেমন কোনও সংযোজন-বিয়োজন নয়, শুধু সময়োপযোগী করে এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে এ খসড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমাও দিয়েছে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত গঠনতন্ত্র পরিবর্তন বিষয়ক উপ-কমিটি। গঠনতন্ত্র পরিবর্তন বিষয়ক উপ-কমিটির একজন সদস্য জানান, গঠনতন্ত্রে একটি সহযোগী সংগঠনের নাম পরিবর্তন হচ্ছে। ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’-এর নাম পাল্টে ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ করা হচ্ছে। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ।’ শীর্ষক স্লোগানে আগামী শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এরই মধ্যে ২৯টি জেলার সম্মেলনের কাজ শেষ করেছি। এত অল্প সময়ে এটা অবিশ্বাস্য, এরপরও করেছি। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন করে দিয়েছি।
সম্মেলনের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা, জাগরণ তৈরি হয়েছে।’ সম্মেলন সফল করতে প্রায় দুই মাস ধরে কাজ করছে ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ১১টি উপকমিটি। এবার কাউন্সিলের ব্যয় ধরা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। সারাদেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর ও পনের হাজার ডেলিগেটসসহ ৫০ হাজার নেতা-কর্মী কাউন্সিলে উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কাউন্সিল উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মঞ্চ এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এবার কাউন্সিলে পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি করা মূল প্যান্ডেলটি অনেক বড়। এর দৈর্ঘ্য ১৫০ ফুট, প্রস্থ ১৪০ ফুট, উচ্চতা ২৮ ফুট। পেছনে কোনো ব্যানার থাকবে না। মঞ্চ সম্পূর্ণ ডিজিটাল। মোট ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান। সম্মেলন প্রস্তুতি উপ-কমিটি জানায়, সম্মেলন উপলক্ষে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রণয়ন,পোস্টার ও দাওয়াত কার্ড হয়ে গেছে। অতিথিদের দাওয়াত দেয়াও শেষ পর্যায়ে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাল তোলা নৌকায় সভামঞ্চ নির্মাণও সম্পন্ন। তিন বছর পর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয়। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩শে অক্টোবর। সে হিসাবে অক্টোবরের ২৩ তারিখে শেষ হয়েছে ত্রিবার্ষিক কমিটির মেয়াদ।