গাজীপুর পতিনিতি
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাসা থেকে থানায় ডেকে নেওয়ার পর তার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাসন থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মালেক খসরুকে বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের জিএমপি কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম।
সোমবার ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নিজ কার্যালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন, উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ, উপ-কমিশনার ট্রাফিক মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জিএমপি কমিশনার জানান, ঘটনার পরপরই বাসন থানার দুইজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুর রহমান ও নুরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরুকে ঘটনার কিছু দিন পর তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাকে বরখাস্তের সুপারিশ করে আইজিপি বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
গাজীপুর মহানগরের বাসন থানাধীন ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকার (শাহনাজ গলি) গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে মৃত্যুর চার দিন আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। জিএমপি কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।সংবাদ সম্মেলনে জিএমপি কমিশনার বলেন, থানা হেফাজতে ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের মৃত্যু হয়নি। এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্য, তার বাসার আশপাশের মানুষজন এবং এর সঙ্গে যুক্ত-অযুক্ত ৮৭ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেছেন রবিউলকে পুলিশ তার মৃত্যুর চার দিন আগেই গ্রেপ্তার করেছিল।
তিনি বলেন, চার দিন আগেই রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তার, রাতে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া, ছেড়ে দেওয়ার সময় তাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি পৌঁছে না দেওয়া, থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, থানার সিসিটিভি ক্যামেরা বিকল হওয়াসহ প্রভৃতি বিষয় মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে।
মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বাসন থানায় সিসিটিভির মনিটরিং ছিল। ঘটনার কয়েক দিন আগে কেন সিসিটিভি অকার্যকর ছিল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে স্থাপন করা হয়েছে। কেউ কেউ হয়তো ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারে। আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার কার্যক্রম শক্তিশালী করার জন্য জিএমপি হেডকোয়ার্টার থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি। এতে কে বা কারা ক্যামেরা বন্ধ বা ক্ষতিসাধন করছে অথবা বন্ধ করে রাখছে তা ধরা পড়বে। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয় হাতে পেয়েছে তারই আলোকে বাসন থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মালেক খসরুর ব্যাপারে আইজিপির কাছে সুপারিশ করে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি, অধিক মেয়াদে তদন্ত করা হচ্ছে। কিছু বিষয় তদন্তে বেরিয়ে আসলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তাছাড়া রবিউলকে জুয়া খেলার যে অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সেই অভিযোগটি সঠিক ছিল কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা ঘটনা প্রসেডিংয়ের জন্য একটা সুপারিশমালা তৈরি করেছি, যার ভিত্তিতে অনুসন্ধান করলে বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে।
তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন, উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার খায়রুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগানের শাহনাজ গলির ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে ১৪ জানুয়ারি জানুয়ারি রাতে তার বাসা থেকে থানায় ডেকে নিয়ে যায় বাসন থানা পুলিশ। পরে পুলিশ তাদের জানায়, ১৭ জানুয়ারি রাতে থানা থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন রবিউল। কিন্তু এলাকায় রবিউল পুলিশ নির্যাতনের পর নিহত হওয়ার খবর প্রচার হওয়ার ১৮ই জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন জনের নামে দুটি মামলা করা হয়েছে।