রাজু আহাম্মেদ গাজীপুর
গাজীপুরে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে (৩ এ মার্চ) কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। এসময় একটি প্রাইভেটকার ভাংচুর এবং একটি প্রাইভেটকার সহ কয়েকটি বাইকে আগুন দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা সোমবার সকালে মহানগরীর ভোগরা বাইপাস এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সেই সঙ্গে কারখানায় ভাঙচুর এবং কয়েকটি যানবাহনে আগুন দিয়েছেন। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্যানারোমা অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের ওই কারখানার শ্রমিকের মৃত্যু নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। শ্রমিকদের দাবি, একজন নারী শ্রমিক কারখানায় কাজ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ছুটি চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ছুটি না দিলে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্বজনেরা তাঁর লাশ নিয়ে যান। অন্যদিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের দাবি, ওই নারী শ্রমিক কারখানার ভবনের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল রোববার মারা যাওয়া শ্রমিকের নাম আফছানা আক্তার লাবনী (৩০)। তিনি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার পাররুখী এলাকার মো. আফসার আলীর মেয়ে। তিনি প্যানারোমা কারখানার জুনিয়র অপারেটর পদে কর্মরত। তার স্বামীর নাম হৃদয়। তিনি স্বামী হৃদয়ের সঙ্গে গাজীপুর মহানগরীর সদর থানার হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে প্যানারোমা অ্যাপারেলসে কাজ করতেন। কারখানা সূত্র জানায়,আফছানার মৃত্যুর খবর জানতে পেরে প্যানারোমা অ্যাপারেলসের বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা আজ সোমবার সকালে ৮টার পরে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাঁরা টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। এতে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে তাঁরা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালান। তাঁরা কারখানার ভিতরে একটি প্রাইভেটকার, একটি কভারভ্যান ভাংচুর করে এবং কারখানার প্রধান ফটকের সামনে একটি প্রাইভেট কার সহ ৭- ৮ টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এবং মহানগর ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন,গতকাল এক নারী শ্রমিক ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। পর্যাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে, আমাদেরও দিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ব্যক্তিগত কারণে আত্মহত্যা করতে পারে। ওই ঘটনায় শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে এবং কারখানার সামনে থাকা কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেয়। সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ একত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। পুলিশ সুপার জানান,বিক্ষোভে নামা শ্রমিকেরা মহানগরীর ভোগরা বাইপাস, চান্দনা চৌরাস্তা ও আশপাশের বিভিন্ন কারখানার গেটে গিয়ে সেখানকার শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান। পরে ১২টি কারখানায় আজকের মতো ছুটি ঘোষণা করা হয়। এবিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়সার আহমেদ বলেন, একজন নারী পোশাকশ্রমিকের আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আফছানার স্বামী হৃদয়কে আটক করা হয়েছে। কোনো অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।