স্টাফ রিপোর্টার : সৌরভ হাসান হাসিব।
নিজ হাতে লিখতে পারে না, তবু দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিতে পিছু হটেনি সামিরা আক্তার শ্যামলী। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে হাতের শক্তি হারিয়েছে সে, কিন্তু হার মানেনি মনের জোরে। এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আজ বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভাংনাহাটি কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থায় দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয় সে।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া পরীক্ষায় দেখা যায়, একটি নিরিবিলি কক্ষে বসে প্রশ্নের উত্তর বলছে সামিরা, আর পাশে বসা তার সহপাঠী নয়, একই মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফা তার জবানবন্দি খাতায় তুলে নিচ্ছে। এক অসাধারণ দৃশ্য, এক অকুণ্ঠ সাহসের গল্প।
শ্যামলীর বাড়ি উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের পটকা গ্রামে। তার বাবা মো. সেলিম মিয়া ও মা নাসিমা আক্তারের অদম্য মেয়ে সে। পটকা আলিম মাদ্রাসা থেকে এবার দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে।
দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে ভাংনাহাটি কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এক শিক্ষিকা সামিরার পরীক্ষায় সহায়তা করছেন পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব নিয়ে।
মাদ্রাসার সুপার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, “দুই মাস আগে সামিরা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়, এরপর থেকে তার হাত আর চলে না। কিন্তু পড়াশোনায় বরাবরই সে ভালো। তার অনুরোধে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষার অনুমতি নেওয়া হয়। আমরা বিশ্বাস করি, সহানুভূতির এই সহযোগিতার মাধ্যমে সে ভালো ফল করবে।”
কেন্দ্র সচিব মারুফ আহমেদ মমতাজী বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিশেষ ব্যবস্থায় তার পরীক্ষা পরিচালনা করা হচ্ছে।”
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, “স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চিকিৎসা মূল্যায়নের মাধ্যমে দেখা গেছে, তার হাতে লেখার কোনো সক্ষমতা নেই। তাই তার বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ছিল।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, “সামিরার মনের জোর আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। আমরা চিকিৎসকদের মতামত নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছি।”
হাত না চললেও থেমে নেই সামিরা — এমন সাহসী পথচলা যেন হয়ে ওঠে দেশের সব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য আলোর দিশা।